করোনা পরীক্ষার লাইন বড় হচ্ছে, নমুনা দিতে সংক্রমণের ঝুঁকি

করোনার পরীক্ষা করানোর নমুনা দেওয়ার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব না মেনে অপেক্ষা করছেন লোকজন। ছবি: আসাদুজ্জামান
করোনার পরীক্ষা করানোর নমুনা দেওয়ার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব না মেনে অপেক্ষা করছেন লোকজন। ছবি: আসাদুজ্জামান
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা মঞ্জু রানী। তাঁর বয়স ৭০ বছর। তিন বছর ধরে ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না তিনি। দুদিন শরীরে তাঁর ১০০ ডিগ্রির ওপরে জ্বর। তাই করোনার পরীক্ষা করানোর জন্য বুধবার সকাল সাতটায় মঞ্জু রানীকে নিয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে আসেন ছেলে বিপ্লব বিশ্বাস। অনেক অপেক্ষার পর দুপুর ১২টার দিকে নমুনা সংগ্রহের ফরম সংগ্রহ করতে সক্ষম হন।
মঞ্জু রানীর ছেলে বিপ্লব বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে করোনার নমুনা পরীক্ষার ফরম সংগ্রহের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। দুপুর ১২টায় কেবল ফরম সংগ্রহ করতে পেরেছি। কখন মায়ের নমুনা দেওয়ার জন্য ডাক পড়বে, তা বলতে পারি না।
আর পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের বাসিন্দা শরৎ সরকার সপরিবার করোনার নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য গতকাল সকাল ৯টায় আসেন মিটফোর্ড হাসপাতালে। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ তিনি ফরম সংগ্রহ করতে পারেননি।
শরৎ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, করোনার নমুনা পরীক্ষা করানো বড়ই কঠিন কাজ। সকাল থেকে কয়েক শ মানুষ এখানে ভিড় করছেন। এই ভিড় ঠেলে কখন যে নমুনা দিয়ে যেতে পারব, তা জানি না।
সরেজমিনে দেখা গেল, মিটফোর্ড হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে আসা ব্যক্তিরা কেউই ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখেননি। যাঁরা সকালে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালের ফরম সংগ্রহ করতে পেরেছেন। দুপুর ১২টা নাগাদ কেউ কেউ নমুনা দিতে পেরেছেন। বাকিরা নমুনা দেওয়ার জন্য জটলা পাকিয়ে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
করোনার পরীক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকা চিকিৎসক অসীম চক্রবর্তী বলেন, ‘মিটফোর্ড হাসপাতালে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয় গত ৭ এপ্রিল থেকে। তখন গড়ে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ মানুষ হাসপাতালে আসতেন। আর এখন করোনার নমুনা পরীক্ষা করানো মানুষের সংখ্যা বেড়েছে চার থেকে পাঁচ গুণ। গড়ে এখন প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষ হাজির হচ্ছেন। আমরা গড়ে প্রতিদিন ১৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে থাকি। পরীক্ষা করার দুই দিনের মাথায় পরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হয়। কোনো ব্যক্তির করোনা পজিটিভ হলে তাঁকে মুঠোফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়।
মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশীদ উন নবী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে আসা অধিকাংশ লোকজন শারীরিক দূরত্ব মানছেন না। আমরা বারবারই তাঁদের বলছি, আপনারা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নমুনা দিয়ে যান, কিন্তু কথা শুনছেন না। আর করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে আসা মানুষের সংখ্যা আগের থেকে অনেক বেড়ে গেছে। তারপরও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি মানুষকে সঠিক সেবা দেওয়ার।
মোহাম্মদপুর থেকে গতকাল সকাল সাতটায় মিটফোর্ড হাসপাতালে আসেন আলামিন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকেও তিনি নমুনা দিতে পারেননি। আলামিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার পরীক্ষা করানো কত যে কঠিন কাজ, তা মিটফোর্ডে না এলে বুঝতে পারতাম না। সকাল থেকে অপেক্ষা করছি। ফরম সংগ্রহ করেছি। কখন আমার নমুনা নেওয়া হবে, তা জানি না।’
১০ মিনিটে টোকেন শেষ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) করোনার পরীক্ষা করানোর জন্য অনলাইনে টোকেন সংগ্রহ করতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাইফ উল্লাহ মুন্সি প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার নমুনা পরীক্ষা করানো লোকের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ১০ মিনিটের মধ্যে আমাদের ওয়েবসাইটের সকল টোকেন শেষ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত আমরা ১৬ হাজার ২৮৬টি নমুনা সংগ্রহ করেছি। এর মধ্যে ৪ হাজার ৩৬৪টি করোনার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ এসেছে।’
বিএসএমএমইউর ওয়েবসাইটে করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য নিবন্ধন পেলে তখন খুদে বার্তার মাধ্যমে ভুক্তভোগীকে জানিয়ে দেওয়া হয়, কখন তাঁকে হাসপাতালে আসতে হবে।
অধ্যাপক সাইফ উল্লাহ মুন্সি বলেন, ‘অনলাইন পদ্ধতি চালু হওয়ায় এখন আর আমাদের হাসপাতালে ভিড় হয় না। নির্ধারিত সময়ে এসে নমুনা দিয়ে যেতে পারছেন। দিনে দিনে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। দিনে গড়ে সাড়ে ৪৫০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।’
সরেজমিনে দেখা গেল, করোনার পরীক্ষা করানোর জন্য নিবন্ধন পাওয়া ব্যক্তিরা হাজির হয়ে প্রথমে চিকিৎসককে দেখাচ্ছেন। পরে চিকিৎসকের সুপারিশ অনুযায়ী করোনার নমুনা দিয়ে যাচ্ছেন। কোনো ভিড় লক্ষ করা যায়নি।
করোনার পরীক্ষা করানোর জন্য নমুনা দেওয়া নূর নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনলাইন সিস্টেমটি অনেক ভালো। গতকাল নিবন্ধন করেছি। আজ নমুনা দিয়ে গেলাম।’
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য অনেকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মানুষ হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন। মিটফোর্ড হাসপাতালে শারীরিক দূরত্ব মানছেন না অনেকে। ফলে করোনার পরীক্ষা করাতে আসা লোকজন করোনায় সংক্রমিত হওয়ার চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। বাস্তবতা হলো, করোনার নমুনা সংগ্রহের জন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বুথ স্থাপন জরুরি। তাতে মানুষের অনেক সুবিধা হবে।
This news from 
Previous
Next Post »